মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় মানুষ এখন রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। আর এ সুযোগে মুনাফালোভীরা বরিশাল নগরীসহ আশপাশের উপজেলা ও থানা এলাকায় কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লাইসেন্স ছাড়াই জ্বালানি গ্যাস বিক্রয় করছে। এমনকি রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলো দেদারছে বিক্রি করছে সিএনজি অটোগুলোতেও। আর এসকল সিলিন্ডার এখন মুদি-মনোহরী, ফার্মেসী, হোটেল মালিকরা বিক্রি করছে। ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে বিস্ফোরণ ও প্রাণহানরি মত ঘটনা। প্রায়ই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত-নিহতের খবর পাওয়া যায়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, একেকটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে এর ভয়াবহতা বিস্তৃতি আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জননিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রাশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
সরেজমিনে নগরীরসহ আশপাশের উপজেলাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ছোট-বড় বিভিন্ন বাজারের শতাধিক দোকানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে তরলকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি সিলিন্ডার। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির ব্যবসা চালানো হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস বিক্রি করবে তাদের বিক্রির স্থান সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে হবে। গ্যাস বিক্রির স্থানে কমপক্ষে পাকা ফ্লোরসহ আধপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে।
এ ছাড়া থাকতে হবে জ্বালানি অধিদপ্তরের অনুমোদন। অথচ এসব ব্যবসায়ী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সাধারণ ব্যবসার মতোই চালিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসা। খোঁজনিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন উপজেলায় হাতেগোনা দু-একজন ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য কারও নেই সুরক্ষা ব্যবস্থা।
এসব ব্যবসায়ীরা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার মুদি দোকান, চায়ের দোকান, ফার্মেসী ও হোটেলসহ বিভিন্ন দোকানে বাড়তি লাভের আশায় এ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এমনকি বাড়তি লাভের আশায় দোকানের বাইরে ফুটপাতে রোদে ফেলে রাখা হয়েছে এসব সিলিন্ডার। রাস্তার পাশে রাখা এসব সিলিন্ডারের পাশ ঘেঁষেই চলছে দ্রুতগামী যানবাহন।
ফলে যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। এ সব বিক্রেতারা বিস্ফোরক অধদিপ্তররে নিয়মে মজুদ আইনও অনুসরণ করছেন না। ব্যবসা পরচিালনার সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করলেও ১০ টির বেশি সিলিন্ডারের আবশ্যকীয় সনদ তাদের নেই। কিন্তু দেখা গেছে বহু দোকানী অর্ধশতাধিকেরও বেশি সিলিন্ডার মজুদ করে রেখেছেন।
নতুন বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি শিব শংকর দাস বলেন, যত্রতত্র এলপি গ্যাসের ব্যবসার কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। দূর্ঘটনা এড়াতে এসব ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সংশ্নিষ্টদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, নগরীতে চলাচলকৃত সিএনজি অটোগুলোতে কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবহৃত হচ্ছে সিলিন্ডার। অথচ সিএনজি অটোতে গ্যাস ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে তৈরীকৃত সিলিন্ডার রয়েছে বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র অফিসার আলাউদ্দিন বলেন, বলেন যত্রতত্র গ্যাস বিক্রয়ের ফলে ঘটতে পারে মারাত্মক দূর্ঘটনা। তিনি বলেন, একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে গ্যাস যত স্থানে ছড়িয়ে পড়বে আগুনের লেলিহান ঠিক সেই পর্যন্তই যাবে এবং এর ভয়াবহতা অনেক।
কাশিপুর বাজার সমিতির সম্পাদক বলেন, অসাবধানতাবসত এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোনো একটিতে আগুন লাগলে বাজারে পুরো ব্যবসায়িক এলাকা ধ্বংস হয়ে যাবে।
তাই জননিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবসায়ীদের বিধি-বিধান মেনে ও বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং পরিদর্শকের লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ প্রাশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply